জন্মগতভাবে হার্টে ছিদ্র শিশুটির। তার চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এত টাকা কোথায় পাবে পরিবার। তাই সন্তানের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে আট মাসের শিশুসন্তানকে নিয়ে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন তার বাবা-মা। উদ্দেশ্য সৈকতে ঘুরে ঘুরে পর্যটকদের কাছে অর্থ সাহায্য চাওয়া। আর এই কাজ করতে গিয়েই অপহরণ ও গণধর্ষণের শিকার হন তার মা। শিশুটি ও তার বাবাকে জিম্মি করে মাকে ধর্ষণ করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।

সোমবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। গণধর্ষণকাণ্ডের প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম আশিককে (৩০) গ্রেফতার করার পর এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ভুক্তভোগী ওই নারী স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তাদের সঙ্গে আট মাস বয়সের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। শিশুটির জন্মগতভাবে হার্টে ছিদ্র থাকায় তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। শিশুটির চিকিৎসার অর্থ সংকুলানের আশায় স্বামীসহ কক্সবাজারে অবস্থান করছিল পরিবারটি। তারা বিত্তবান পর্যটকদের নিকট হতে অর্থ সাহায্য চাইতেন। এ সময় তিনি অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

তিনি বলেন, র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আশিক তরুণীকে ধর্ষণ ও তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়ার কথা স্বীকার করেছে।

র‌্যাব জানায়, আশিকুল ইসলাম আশিক স্থানীয়ভাবে ‘টর্নেডো’ আশিক নামে পরিচিত। ধর্ষণের ঘটনার পর দাড়ি-গোফ কেটে চেহারা বদলে তিনি কক্সবাজার ছাড়েন।

তিনি জানান, ঘটনার পরপর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ হওয়ায় আশিক দাড়ি-গোফ কেটে, ভ্রু প্লাক করে কক্সবাজার থেকে এসি বাসে প্রথমে ঢাকায় আসে। পরে আরেকটি বাসে মাদারীপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় যায়। সেখান থেকে কুয়াকাটায় গিয়ে আত্মগোপনের পরিকল্পনা ছিল তার। তবে কুয়াকাটা যাওয়ার চেষ্টাকালে রোববার রাতে মাদারীপুরের মোস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত আশিক কক্সবাজারে পর্যটক এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মূলহোতা। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। গ্রেফতারকৃত বিগত ২০১২ বছর হতে কক্সবাজার পর্যটক এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সে ২০১৪ সালে প্রথমবার অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছিল বলে জানিয়েছে। আশিক ও তার সিন্ডিকেট পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। সে পর্যটন এলাকায় বিভিন্ন হোটেলে ম্যানেজারের সঙ্গে যোগসাজশে ট্যুরিস্টদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করত।

র‌্যাব জানায়, আশিক পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন রকম জবরদখল ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে। সে পর্যটন এলাকার সুগন্ধা নামক স্থানে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট জোরপূর্বক কম টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে ক্ষেত্রে বিশেষে দ্বিগুণ ও তিনগুণ ভাড়া সংগ্রহ করে মূল মালিকদের বঞ্চিত করে থাকে। গ্রেফতারকৃত বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অবৈধ দখল করে ও চাঁদা দাবি করে থাকে।

তার চক্রের সদস্যরা রাত্রিকালীন সি-বিচে আগত ট্যুরিস্টদের হেনস্তা, মোবাইল ছিনতাই, ফাঁদে ফেলা ও নিয়মিত ইভটিজিং করত। পাশাপাশি হোটেল-মোটেল জোনে বিভিন্ন ট্যুরিস্টের সুযোগ বুঝে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করত। তার নামে ইতোমধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ ১২টি মামলা চলমান রয়েছে। ইতিপূর্বে সে ৫ বার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে এবং দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছে।